নাটক

শিশু নাটকঃ পাঠশালা

                                                                           

                                            সূচনা

**মঞ্চে একটি ক্লাসরুমের সাজেসান থাকবে। একটি চেয়ার একটি টেবিল অবশ্যই থাকতে হবে।  
**রাজন কানাইলাল আমিনা কাজল বই খাতা কলম হাতে মঞ্চে প্রবেশ করবে।

আমিনাঃ  কই কেউতো আসেনি,
কানাইলালঃ    আসবে আসবে,
রাজনঃ   কানাই,
কানাইলালঃ   তুই আমাকে বারবার কানাই বলে ডাকছিস কেন !! আমার নাম কানাইলাল,
রাজনঃ    কিন্তু স্যারতো তোকে কানাই বলে ডাকেন,
কানাইলালঃ    তা ডাকেন, স্যার ডাকলেতো কিছু বলার নেই, কিছু বললে দুঘা খেতে হবে,
কাজলঃ   চলো কানামাছি খেলি,
আমিনাঃ   হ্যাঁ স্যার আসতে অনেক দেরী, চলো খেলি,

(ওরা একজনের/............... চোখ বেঁধে খেলছে, হাসছে একে ওপরকে ধাক্কা দিচ্ছে)    

                    ***মঞ্চে প্রবেশ করবে পলাশ***

পলাশঃ   কি-রে তোরা খেলছিস !! 
কানাইলালঃ   তাহলে কি করবো, স্যারতো আসেননি
পলাশঃ   বই খুলে ততক্ষণে পড়াটা মুখস্থ করলেইতো পারিস। ক্লাসেতো একদিনও পড়া পারিস না, প্রতিদিন দুহাতে বেতের বারি খেতে হয়।
রাজনঃ   কানাই ওর সাথে পেরে উঠবিনা, অতো ক্লাসের ফার্স্টবয়।
পলাশঃ আবারো ইংরেজিতে কথা বলছিস !!! তোরা বোধহয় স্যারের কথাগুলো ভুলেযাস। স্যার ক্লাসে পড়াননি, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির কথা, রফিক সালাম বরকত আরও কতো তাজা প্রান এই বাংলা ভাষার জন্য ঝরে পরেছিল। ওরা ভাষার জন্য নিজের প্রাণ দিয়ে দিতে পেরেছে, আর আমরা আমাদের বাংলা ভাষাটা উচ্চারণ করে ওদের প্রতি সম্মান দেখাতে পারছিনা। যাহ্‌ তোদের নিয়ে আর পারাগেলনা !!
কানাইঃ কেন! স্যারকী ক্লাসে ইংরেজি পড়াননা ? কই তখনতো কিছু বলিসনা।
রাজনঃ আরে বলবে কি-রে, বললেতো বেত খাবে, হা হা হা।
পলাশঃ ক্লাসে পড়ানো হয় শেখার জন্য যেখানে সেখানে কথা বলার জন্য নয়।
আমিনাঃ কথা বলা বন্ধ, চলো খেলবো।
কাজলঃ কানামাছি ভুভু, কানামাছি ভুভু,

                ** সবাই উচ্চস্বরে হাসছে***  
                ** হাসান, ইভা, ও সুমনের মঞ্চে প্রবেশ**

হাসানঃ খেলা শেষ, আমি এসেগেছি এবার গান হবে গান।
পলাশঃ স্যার এসে যদি শুনে ফেলেন ?
সুমনঃ একজন রাস্তার দিকে চেয়ে থাকবি।
ইভাঃ তাহলে গান গাইবে কে ?
হাসানঃ আমাদের কানাইলাল আছেনা, ও-ই গাইবে,

              *** সবাই হাততালি দেবে*** 

পলাশঃ গান গাইতে আমার কোন আপত্তি নেই, তবে বাংলা গান গাইতে হবে।

           *** আবারো সবাই হাততালি দেবে***

কানাইঃ শুনো, আমার গানের টিচার আমাকে একটি নতুন গান শিখিয়েছেন.........
পলাশঃ টিচার টিচার !!! আবারো ইংরেজি !!!
কানাইঃ ধ্যাত, দিলিতো মুডটা নষ্ট করে,
পলাশঃ আবার মুড !!!!! ওফফফ, (মাথায় হাত), ঠিক আছে শুরু কর,

                 ***গানের সাথে মাঝি মাল্লার কোরিওগ্রাফি*** 










  








                                  ** মঞ্চে সজলের প্রবেশ**

সজলঃ কি-রে তোরা গান গাচ্ছিস !!!!!
রাজনঃ আজ তোর এতো দেরী হল কেনরে ??
সজলঃ আর বলিসনা, গত রাতে টেলিভিশনে সংসদ অধিবেশন চলছিলো, বাবা বললেন সংসদ অধিবেশন দেখে তারপর ঘুমাতে হবে, কি আর করা, ঘুমাতে দেরী হয়েগেল।  
হাসানঃ হা হা হা, সবাই চুপ, এখন আমরা সংসদ সংসদ খেলবো, আমি হবো স্পীকার, (শিক্ষকের চেয়ারে বসে) কে কি মন্ত্রী হবে বলো ??
রাজনঃ আমি আইনমন্ত্রী,
কানাইঃ আমি অর্থমন্ত্রী,
সজলঃ আমি যোগাযোগমন্ত্রী,
ইভাঃ আমি হবো ধর্মমন্ত্রী,
সুমনঃ আমি স্পীকার হবো
হাসানঃ আরে আরে স্পীকারতো আমি !!
সুমনঃ না আমি স্পীকার হবো,
হাসানঃ না, আমি স্পীকার,
সুমনঃ না, আমি, চেয়ারথেকে নাম বলছি, নাম,
হাসানঃ কি !!! আমাকে তুই ধাক্কা দিয়েছিস,

         ** হাসান এবং সুমন একজন আরেকজনের শার্টের কলারে ধরে**
             **হট্ট্রগুল বেঁধেযায়**  সহপাঠীরা ওদের কে থামানোর চেষ্টা করছে***     
         ** ইতিমধ্যে শিক্ষকের প্রবেশ***

শিক্ষকঃ এই তোরা করছিস কি !!! থাম বলছি, থাম,

            ** ওরা থেমেযায়, এবং সবাই ভয়ে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে***

শিক্ষকঃ তোরা মারামারি করছিলে কেন ??

        ** কোনও জবাব নেই সবাই চুপ**

শিক্ষকঃ কথা বলছোনা কেন ?? পলাশ কি হয়েছিল বলতো ??
পলাশঃ স্যার ওরা সংসদ সংসদ খেলছিল, তারপর স্পীকার হওয়া নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া বেঁধেযায়,
শিক্ষকঃ সংসদ সংসদ খেলা !!! আশ্চর্য, সংসদ কি কোনও খেলার বিষয়-বস্তু হল !! তা মন্ত্রী কারা ? প্রধানমন্ত্রী কে ?
পলাশঃ স্যার শুরুতেই ঝগড়া বেঁধেগেলো, তাই কেউ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পায়নি,
শিক্ষকঃ সব জায়গায় একই অবস্থা !! ক্ষমতার লোভ আমাদের এমন হয়েছেযে এটা আজকাল বাচ্চাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পরেছে !! ওরা টেলিভিশন স্যাটেলাইট চ্যানেলে যা দেখছে তাই শিখছে, এতে এই ছোট বাচ্চাদের কোনও দোষ আছে ?? এই প্রশ্নটা আমি কারকাছে করবো !! এটা ধীরে ধীরে আমাদের সংস্কৃতি হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা বলতো তোমাদের কে কি মন্ত্রী হয়েছিলে ??
সজলঃ স্যার আমি যোগাযোগমন্ত্রী হয়েছিলাম, আমার বাবা প্রায়ই বলতেন আমি বড়হয়ে যেন যোগাযোগমন্ত্রী হই,
শিক্ষকঃ কী !!! তুমি যোগাযোগমন্ত্রী হবে, কেন, তোমাদের কারও মনে নেই!! তোমার ভাই                                  সেদিন আমাদের স্কুলের সাঁকোটা ঝুলাঝুলি করে ভেঙ্গেদেয়, আমরা দুদিন স্কুলে আসতে পারিনি, তোমার বাবার কাছে বিচার চাইতে গেলে তিনি বলেন ছেলে বকেগেছে আমার কিছুই করার নেই। আর সেই বাবা স্বপ্ন দেখেন তার ছেলে যোগাযোগমন্ত্রী হবে, বাহ বাহ , শুনো তোমার বাবাকে গিয়ে বলো স্কুলের সাঁকোটা ভালকরে ঠিক করে দিতে, আমরা যেন ঠিকমতো  স্কুলে আসাযাওয়া করতে পারি, তবেইনা তিনি স্বপ্ন দেখবেন তুমি যোগাযোগমন্ত্রী হবে। আর কে কি হয়েছিলে ??  
কানাইঃ স্যার, আমি অর্থমন্ত্রী হয়েছিলাম। বাবা বলেছেন বড়হয়ে যেন আমি অর্থমন্ত্রী হই, 
শিক্ষকঃ বাহ বাহ, তোমার বাবা মুদি দোকানে বসে কি হিসেবটাইনা করেন, বাকীতে ১০ টাকার জিনিস আনলে পরের সপ্তাহে গিয়ে দেখাযায় খাতায় ১২ টাকা ধরে ফেলেছেন, সেদিন আমার সাথেও তোমার বাবা তাই করেছেন, তোমার বাবাকে গিয়ে বল দোকানের হিসেবটা যেন ঠিক মতো রাখেন, তারপর তোমাকে নিয়ে যেন স্বপ্ন দেখেন। আর কে কি হয়েছিলে ?
 ইভাঃ স্যার ধর্ম শান্তির কথা বলে ধর্ম ন্যায়ের কথা বলে তাই আমার বাবা বলতেন আমি বড়হয়ে যেন ধর্মমন্ত্রী হই,
শিক্ষকঃ তোমার বাবার নামটা কি ?
ইভাঃ আমার বাবার নাম জাফর খন্দকার,
শিক্ষকঃ জাফর খুন্দকার!!!!!  বড়ই চমৎকার নাম !!! তা নামের আগে মীর শব্দটা লাগালেই বোধহয় ভালো হতো, ধর্ম শান্তির কথা বলে ধর্ম ন্যায়ের কথা বলে ঠিক আছে। কিন্তু তোমার বাবার মুখে সেকথা মানায়না। সবাই জানে জাফর খন্দকার একজন যুদ্ধাপরাধী ছিল। সেই ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক-হানাদার বাহিনীদের সাহায্য করেছিল। কতো জুদ্ধাদের ওদের দিয়ে মাড়িয়েছে হিসেব নেই, পাক-দের সাথে মিশে মানুষের রক্ত নিয়ে খেলেছে, নরপিচাস !!!
পলাশঃ স্যার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আপনি কোথায় ছিলেন ?
শিক্ষকঃ আমি ? আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, ২৫ শে মার্চ রাতে পাক-হায়েনারা এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করলো, ওরা প্রথম ধফায়, ওরা প্রথম দফায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষককে হত্যা করলো। আমি কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকি, কিছুদিন পর গ্রামের বাড়ি চলে আসি,। বাড়িতে এসে দেখি আমার মা, বাবা, আমার ১৩ বছর বয়সের ছোট আদরের বোনটার রক্ত লেগে আছে ঘরের দেয়ালে, যেন আমাকে বলছে ভাইয়া তুমি কোথায়, আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও, আমি এবার ১ নম্বরে পাস করেছি। তুমিনা বলেছিলে আমার জন্য ঢাকা থেকে আলতা চুড়ি আর নতুন জামাকাপড় আনবে, কই তুমি ভাইয়া,। মায়ের রক্ত যেন বলছে, বাবা আহমেদ আমার শেষ নিঃশ্বাসের আগে একটিবার আমাকে মা বলে ডাক, মাগো মা মা মা (কান্না)



 ***গান এবং কোরিওগ্রাফি***

দেয়ালে টাঙ্গানো আমার বাবার ছবিটা মাটিতে পড়ে আছে, পাক-হানাদারদের বুটের আঘাতে ছবির কাঁচটা ভেঙ্গে চুরমার হয়েগেছে। বাবার ছবি যেন আমাকে বলছে, আহমেদ এই দেশটা তোরা স্বাধীন করবে, রক্ত দিয়ে হলেও প্রাণ দিয়ে হলেও।
পলাশঃ  আপনি ওদের মাড়তে পারলেননা স্যার ?
সিক্ষকঃ হ্যাঁ, আমিও তখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরি। যেখানে সেখানে পড়েথাকা পোঁচা লাশের গন্ধ, নারীর ইজ্জত হারানোর চিৎকার, সন্তান হারানোর চিৎকার। আহ, কি বীভৎস!!! এসব তোরা দেখিসনি, কতো তাজা প্রাণ তাজা রক্ত দিতে হয়েছিল এই স্বাধীনতার জন্য। বলতে পারিস তোরা কি পেয়েছি আমরা !  সবিইতো হারাইলাম। তোরা আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। তোরা মন্ত্রী হবি এম্পি হবি, আর আমরা ভিখারির মতো ছেঁড়া স্যান্ডেল, অনেক পুরনো ছাতা নিয়ে সেই কতো বছর অবদি তোদের শিক্ষা দান করছি। তোদের মতো কতো ছাত্র আজ অনেক বড় হয়েছে, কই তাদের কাছে গেলেতো আমাদের চেনেনা !!! বল তোরা আমাদের কি দিবি ? টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি এসবতো আমরা চাইনি। আমারা চেয়েছিলা একটি সুখি সুন্দর স্বাধীন দেশ, সোনার বাংলাদেশ। বল দিবি তোরা বুড়ো বয়সেও তোদের কাছে আমাদের সেই চাওয়াটাকি থাকতে পারেনা ??
কই কেউ কিছু বলছিসনা তোরা, আমি এটুকু জ্ঞ্যান তোদের দেইনি, বল একবার শুধু বল, বলরে
বল তোরা আহ কেউ কিছু বলছেনা !!!! কেন বলছেনা !! না এ হতে পারেনা, আমার দেয়া শিক্ষা বৃথা যেতে পারেনা। না হ (কান্না)

***** একটি গান এবং কোরিওগ্রাফি ****     


     
           

               
              
           
            
    























                                                                    সমাপ্ত

কোন মন্তব্য নেই: